দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৫৬ উপজেলায় ভোট গ্রহণ শুরু চলছে। এর মধ্যে ২৪টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম), বাকি উপজেলাগুলোতে কাগজের ব্যালটে ভোট হচ্ছে। মঙ্গলবার (২১ মে) সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোট গ্রহণ চলবে টানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সোমবার (২০ মে) ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানো হয়েছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট উপজেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা এবং যান চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৬টি উপজেলায় বিজিবি, র্যাব, কোস্ট গার্ডের বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোর নির্বাচনের চেয়ে এবার ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়তি সদস্য থাকছেন। এসব প্রস্তুতির পরও ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে চিন্তায় ইসি। সোমবার (২০ মে) নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, ভোটের হার বেশি হলে আমরা খুশি হব। কিন্তু ভোটার উপস্থিতি বেশি না হলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
এবার চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন করছে ইসি। ৮ মে অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ ভোট পড়ে। আগের উপজেলা ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবার ভোটার উপস্থিতি কম। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। রোববার ভোটার বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান। বরগুনায় শিল্পকলা একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ভোটারদের কেন্দ্রে আনার দায়িত্ব প্রার্থীদের। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নিরাপত্তা দেওয়া। যাতে ভোটাররা কেন্দ্রে এসে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে চলে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, নির্ভয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে ভোট দিতে আসতে এলাকায় মাইকিং করা হবে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চলবে। ভোটাররা কেন্দ্রে এসে নিরাপদে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
২ এপ্রিল দ্বিতীয় ধাপের ১৬১ উপজেলা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে আজ ভোটগ্রহণ হচ্ছে ১৫৬টিতে। রাউজান ও কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন হবে না। রুমা ও মৌলভীবাজার উপজেলার ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। বরিশালের বাবুগঞ্জ, উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলার ভোট এ ধাপে থাকলেও তা পিছিয়ে চতুর্থ ধাপে গেছে। একই জেলার মুলাদী ও হিজলা উপজেলার ভোট চতুর্থ ধাপ থেকে এ ধাপে এসেছে।
ইসি জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ১৮২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৬০৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৬৯৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫২৮ জন। এ নির্বাচনে ভোটার ৩ কোটি ৫২ লাখ। ভোটারদের মধ্যে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫ হাজার পুরুষ এবং ১ কোটি ৭২ লাখ ৯৯ হাজার নারী। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৩ হাজার ১৬টি ও ভোটকক্ষ ৯১ হাজার ৫৮৯টি। এ নির্বাচনে ৭ জন চেয়ারম্যানসহ ২২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ওইসব পদ বাদে বাকিগুলোয় আজ ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনে নিরাপত্তায় দায়িত্বে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় তিন লাখ সদস্য। এর মধ্যে ১ লাখ ৯৩ হাজার আনসার, ৮৯ হাজার ৮৬৩ জন পুলিশ, ২ হাজার ৭৬৮ জন র্যাব এবং ৪৫৮ প্লাটুন বিজিবি সদস্য রয়েছেন। স্বাভাবিক এলাকার ভোটকেন্দ্রের পাহারায় ১৭ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮-১৯ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন।
এদিকে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, ভোটের হার বেশি হলে আমরা খুশি। কিন্তু না হলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সোমবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। মো. আলমগীর বলেন, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের দিন সকালে বৃষ্টি ছিল। ধান কাটার মৌসুম ছিল। একটি বড় দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এ তিন কারণের বাইরেও ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার আরও কারণ থাকতে পারে। এসব কারণে ভোটার উপস্থিতি কম। তিনি বলেন, ভোট পড়ার হার কম হওয়ার জন্য দায়ী কমিশনও না, অন্য কেউও না। কারণ, বিভিন্ন কারণে ভোটাররা ভোট দিতে চান না। ভোটের হার বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ইসির কাজ না।