বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে। সুপ্রিম কোর্ট এই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত ছবি এবং ভিডিওসহ মামলার পুরো অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনটি নিজেদের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে। হোলির রাতে বিচারপতি ভার্মার বাড়িতে আগুন নেভানোর অভিযানের ছবি ও ভিডিও রয়েছে সেই ২৫ পাতার রিপোর্টেই। তবে যশবন্ত বর্মা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
গত ১৪ মার্চ হোলির রাতে ১১টা ৩৫ মিনিট নাগাদ দিল্লিতে বিচারপতি বর্মার বাসভবনে আগুন লাগে। এরপরই দমকল কর্মীরা আগুন নেভাতে আসেন। এই সময় সেখানে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা পাওয়া যায়।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিচারপতি জাস্টিস বর্মা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য কখনই বাড়ির স্টোর রুমে কোনো নগদ টাকা রাখেননি। সেই বিষয়টি তারা অস্বীকার করছেন।
বিচারপত্রি বর্মা এ বিষয়ে বলেন, এই নগদ টাকা আমাদের কাছে রাখা ছিল বা তা আমাদের বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, এমন ধারণা সম্পূর্ণ হাস্যকর। স্টাফ কোয়ার্টারের কাছাকাছি আউটহাউস এমন ঘরে নগদ জমিয়ে রাখা হবে, এটা অনুমান করা অবিশ্বাস্য। সেখানে সহজেই যে কেউ যাওয়া আসা করতে পারে। এই ঘরটি আমাদের থাকার জায়গা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। একটি বাউন্ডারি প্রাচীরের মাধ্যমে আমাদের থাকার জায়গার থেকে সেই আউটহাউসটি আলাদা করা আছে। আমি শুধু চাই মিডিয়া আমাকে অভিযুক্ত না করুক এবং মানহানি করার আগে তদন্ত করুক।
তিনি দাবি করেছেন, তার বাসভবনের কোনো সদস্যকে দেখানো হয়নি যে টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বরং তাকে ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিচারপতির বর্মা।
জানা গেছে, দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিকে উপাধ্যায় জাস্টিস বর্মার বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নগদ সংক্রান্ত তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন।
সেই রিপোর্টে তিনি বলেন, এই ঘটনা সংক্রান্ত নথি খতিয়ে দেখেছি এবং বিচারপতি যশবন্ত বর্মার জবাবও শুনেছি। এর থেকে আমি বেশ কিছু তথ্য জানতে পেরেছি। পুলিশ কমিশনার তার ১৬ মার্চ রিপোর্টে বলেছেন- বিচারপতি বর্মার বাসভবনে নিযুক্ত প্রহরী নিজের বয়ানে জানিয়েছেন, ১৫ মার্চ সকালে যে ঘরে আগুন লেগেছিল সেখান থেকে ধ্বংসাবশেষ এবং অন্যান্য আংশিক পোড়া জিনিস সরানো হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে তদন্তে দেখা গেছে, বাংলোর বাসিন্দা, গৃহকর্মী, মালি ও সিপিডব্লিউডি কর্মী ছাড়া অন্য কেউ ওই কক্ষে প্রবেশ করেননি। আমি মনে করি, পুরো বিষয়টির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া দরকার।
এদিকে বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত যে ভিডিওটি সামনে এসেছে, তাতে দেখা গেছে বিপুল পরিমাণ আধপোড়া নগদ টাকা সেখানে আছে। ভিডিওটি দিল্লি পুলিশ তুলেছিল। ১ মিনিট ৭ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, অনেক নোট পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এবং কিছু এখনো জ্বলছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত দমকল কর্মীদের সেই সব নোট সরিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করতে দেখা যায়। ঘটনাস্থলে কিছু বোতল ও কাপড়ের টুকরোও দেখা যায়।
দিল্লি হাইকোর্টের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বিচারপতি বর্মা ১৯৯২ সালের ৮ আগস্ট আইনজীবী হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এলাহাবাদ হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি। ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর তিনি দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। সম্প্রতি তাকে ফের এলাহাবাদ হাইকোর্টে বদলির নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কলেজিয়াম। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।